১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস - ভালোবাসা দিবস সম্পর্কে ইসলাম কি বলে

১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন আজকের আর্টিকেলে। ১৪ ফেব্রুয়ারি ও হলো বিশ্ব ভালবাসা দিবস যেটি সারা বিশ্বে পালনের পাশাপাশি বাংলাদেশেও পালন করা হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস কিভাবে এবং কোথা থেকে এর জন্ম হয়েছিল সেসব বিষয়ে আমরা অনেকেই জানিনা।

১৪-ফেব্রুয়ারি-ভালোবাসা-দিবসের-ইতিহাস

সারা বিশ্বে অন্যান্য দেশের মতোই প্রতিবছর ভালবাসা দিবস অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালন করা হয়ে আসছে। তবে ভালোবাসা দিবস কিভাবে মানব সভ্যতায় এসেছিল সেটা কেউই ভালোমতো জানেন না। আজকে পোস্টে আমরা জানবো ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস সম্পর্কে। চলুন তাহলে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

পোস্ট সূচিপত্রঃ ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস গুলো বিস্তারিত হলোঃ

১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস 

১৪ ফেব্রুয়ারি ভালবাসা দিবসের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে আজকে পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস এসেছে প্রাচীন সভ্যতা থেকে। প্রাচীন রোমে একজন শিক্ষক ছিলেন। যার নাম ছিল ভ্যালেন্টাইন। তিনি অসুস্থ মানুষের সেবা দিতেন এবং তেতো ওষুধের সাথে দুধ বা মধু মিশিয়ে খেতে দিতেন। ভ্যালেন্টাইন নামের সেই ডাক্তার খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন। প্রাচীন রোমে খ্রিস্ট ধর্মের কোন প্রচলন ছিল না। কিন্তু ভ্যালেন্টাইন খ্রিস্টধর্মর প্রচার করছিলেন। 

সেই সময়ে ভ্যালেন্টাইন একটি অন্ধ মেয়ের চিকিৎসা করছিলেন। অন্ধ মেয়েটির চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে রুমের শূন্য বাহিনীরা ভ্যালেন্টাইনকে ধরে নিয়ে যায়। ২৭০ খ্রিস্টাব্দের রোমের সম্রাট ছিলেন ক্লাডিয়ার্স। নির্দেশে ২৭০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ভ্যালেন্টাইন মৃত্যুর আগে একটি চিরকুট লিখে যায়। চিরকুটটি লিখা ছিল অন্ধ মেয়েটির নামে। সেই চিরকুটে লিখা ছিল তোমার ভ্যালেন্টাইন। ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে ১৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে ভ্যালেন্টাইন ডে হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

তারপর থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস পালিত হয়। বর্তমান সময়ে ভালোবাসা দিবসে যতটা প্রচার রয়েছে কিন্তু ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে সেই সময় এতটা প্রচার ছিল না। ১৭৭৬ সালে ফ্রান্সের ভালোবাসা দিবস নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। কেননা সে সময় গির্জার ভেতরেও মানুষ ও মদ্যপানে বিরত থাকতেন না। তবে বর্তমান সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কোটি ডলার খরচ করে ভালোবাসা দিবস পালন করা হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস এখন বাংলাদেশে ও গণহারে পালন করা হচ্ছে।

১৪ই ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস পালন করা হয় কেন 

১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসকে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এই দিনে সারা বিশ্বে ভালোবাসা দিবস বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে পালন করা হয়। প্রাচীন রোমের সম্রাট ক্লাডিয়াস যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছিল। তিনি দেখছিলেন যে যুদ্ধে যুবকরা বেশি শক্তিশালী এবং ধৈর্যশীল হয়। তাই তিনি সে সময় যুবকদের বিবাহ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। বিবাহ নিষিদ্ধ ঘোষণা করার কারণ ছিল যেন যুবকরা সেনাবাহিনীতে যোগদান করতে পারে। তার এরকম সিদ্ধান্ত সকল যুবক-যুবতীরা ক্ষিপ্ত হয়ে যায়।

ভ্যালেন্টাইন নামের এক যুবক রুমের সম্রাটের সিদ্ধান্তে কঠোর প্রতিবাদ জানান। ভ্যালেন্টাইন এই সিদ্ধান্তকে অবমাননা করে গোপনে যুবক-যুবতীদের বিবাহ দিতে থাকেন। ভ্যালেন্টাইন এর গোপনীয় এই কাজ কোনভাবে সম্রাট জানতে পেরে যায়। এবং ভ্যালেন্টাইনকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন। ২৭০ খ্রিস্টাব্দে ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন কে হত্যা করার আদেশ দেওয়া হয়। এই দিনেই ভ্যালেন্টাইনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। সেই থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইন ডে অর্থাৎ ভালবাসা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস নিয়ে ইসলাম কি বলে 

ইসলামে ভালোবাসা হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ গুন। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসায় দিবস সম্পর্কে ইসলামে কোন কিছু উল্লেখ করা হয়নি। তবে মহান আল্লাহ তায়ালার দেওয়া প্রতিটা দিনই মুসলমানদের জন্য ভালোবাসার দিন। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালবাসা দিবস পাশ্চাত্য উৎসব এবং এর উৎপন্ন হয়েছে খ্রিস্ট ধর্ম থেকে। যেটি রোমান সভ্যতার মধ্যে সংযুক্ত। ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রেম ভালবাসা হতে হবে মহান আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি সর্বোচ্চ।

১৪-ফেব্রুয়ারি-ভালোবাসা-দিবসের-ইতিহাস

পিতা-মাতা পরিবার এবং হালাল সম্পর্কের মধ্যেও ভালোবাসা বিরাজমান। ইসলামে বিবাহ ব্যতীত কোন সম্পর্কই হালাল নয়। বিবাহ বহির্ভূত প্রেম ভালোবাসার সম্পর্ক যেটা হারাম সম্পর্ক। ইসলাম দাম্পত্য জীবনে ভালোবাসা ও আন্তরিকতার মিষ্টতা দান করেছেন। হালাল সম্পর্কের ভালোবাসা অতীব পুণ্যের একটি কাজ। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে কার ভালোবাসা গুলো পবিত্র এবং নেকি অর্জনের কাজ। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস নামে যে বেহাপনা চলতে থাকে সেগুলো ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পূর্ণ হারাম।

অবৈধ সম্পর্ক এবং সময়ও অর্থের অপব্যবহার ইত্যাদি কার্যকলাপ গুলো ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম। গভীর ভালোবাসা হবে স্বামী স্ত্রী, মাতা পিতা ও সন্তান এর প্রতি। যে ভালবাসাগুলো বৈধ এবং হালাল। আজকাল ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস নামে পালিত হয় বেহায়াপনা দিবস। এই দিনে যুবক যুবতীরা ভালোবাসার নামে অপকর্মে লিপ্ত হয়। হাজারো যুবক যুবতীরা এই দিনে পাপের সাগরে ডুবে যায়। ইসলামে ভালোবাসা প্রকাশ ও উদযাপন করা অবশ্যই বৈধ তবে সেটা হালাল পন্থায়।

১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস বাংলাদেশে 

১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস সারা বিশ্বে যেমন পালিত হয় তেমনি বাংলাদেশেও পালন করা হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস হিসেবে এই দিনটিকে ছোট বড় সকলে পালন করে। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসার দিবস প্রাচীন সভ্যতার। ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে প্রাচীন সভ্যতাই এই দিবসটি পালন করা হয়। তবে এসেছে বাংলাদেশে ১৯৮০ সালের পর থেকে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে ভালোবাসা দিবস পালিত হয় খুবই আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে।

স্বামী স্ত্রী,প্রেমিক প্রেমিকা, ভাই বোন, বাবা-মা সন্তান এদের মধ্যে ভালোবাসার প্রকাশিত পাই। তবে এক্ষেত্রে প্রেমিক-প্রেমিকা বিবাহ বহির্ভূত অপকর্মে লিপ্ত হয়ে থাকে। যেটি একেবারে উচিত নয়। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার একটি সড়কের নাম ভালোবাসা দিবসে হিসেবে রাখা হয়। সেই সড়কটির নাম হলো লাভ লেন। তবে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার এই সড়কের নাম লাভলিন রাখতে সক্ষম হয়েছেন শফিক রহমান। ভালোবাসা দিবসকে প্রকৃত ভালোবাসায় বাধঁতে মায়ের প্রতি ভালোবাসা দেখানো উচিত।

১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস আধুনিক যুগে উদযাপন

আধুনিক যুগে এসে ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ব্যাপক হারে পালিত হয়। এই ভালোবাসা দিবসে প্রেমিক প্রেমিকা, স্বামী স্ত্রী,বন্ধু এবং প্রিয়জনদের সাথে ভালোবাসার আদান-প্রদান প্রকাশ পায়। আধুনিক যুগে ভালোবাসা উদযাপনের বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস এই দিনে লাল গোলাপ, চকলেট, জুয়েলারি কার্ড ইত্যাদির মাধ্যমে ভালোবাসা প্রকাশ পায়। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসের বিভিন্ন আয়োজন ও ডিনারের ব্যবস্থা করা হয়।

১৪-ফেব্রুয়ারি-ভালোবাসা-দিবসের-ইতিহাস

১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসের দিনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সোশ্যাল মিডিয়া যেমন ফেইসবুক,ইনস্টাগ্রাম,টুইটার ইত্যাদির মাধ্যমে ভালোবাসা প্রকাশ করার জন্য ছবি ভিডিও পোস্ট শেয়ার করে থাকে। ভালোবাসা দিবসের শহর এবং বিভিন্ন দেশ ঘিরে বিভিন্ন আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়। বিভিন্ন মিউজিক্যাল প্রোগ্রাম, মেলা এবং বিভিন্ন কুইজ প্রতিযোগিতার আনুষ্ঠানিকতা করা হয়। আধুনিক যুগের বিশ্ব ভালবাসা দিবস অর্থাৎ ১৪ ফেব্রুয়ারি অনেক জাঁকজমক ভাবে উদযাপিত হয়।

শেষ কথাঃ ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস 

১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসের ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আজকের পোস্টে। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস হল বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এই দিবসটির আধুনিক যুগে জাঁকজমক ভাবে পালিত হয়। বিভিন্ন সম্পর্কের মানুষেরা একে অপরের প্রতি ভালোবাসা আদান-প্রদান করে থাকে। তবে এটি আমাদের ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে বিবাহ ব্যতীত সম্পর্ক বা ভালোবাসা সম্পূর্ণ হারাম। তাই আসুন আমরা হালাল সম্পর্কে জড়িয়ে ভালোবাসা আদান-প্রদান করি। বিভিন্ন তথ্য সম্পর্কিত পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথেই থাকুন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url