গর্ভাবস্থায় রক্তপাত বন্ধের উপায় জানুন

গর্ভাবস্থায় রক্তপাত বন্ধের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন আজকের আর্টিকেলে। গর্ভাবস্থায় রক্তপাত হওয়া একদমই ভালো লক্ষণ নয়। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে গর্ভে সন্তান জীবিত থাকার পরেও রক্তপাত হয়। যেটাকে বলা হয় 'thretend মিসক্যারেজ'।

গর্ভাবস্থায়-রক্তপাত-বন্ধের-উপায়-জানুন

রক্তপাত হলে হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসার মাধ্যমে রক্তপাত বন্ধ করা যায়। গর্ভাবস্থায় রক্তপাত যেকোনো সময় হতে পারে। প্রথম তিন মাসে কিংবা পরবর্তী তিন মাস অথবা শেষের তিন মাসে। রক্তপাত হওয়ার বিভিন্ন কারণ এবং এর উপর চিকিৎসা নির্ভর করে গর্ভাবস্থার সময়কাল এবং রক্তপাতের অবস্থা হালকা বা মাঝারি এর ওপর।

পেজ সূচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় রক্তপাত বন্ধের উপায় গুলো হলোঃ

গর্ভাবস্থায় রক্তপাত বন্ধের উপায়

গর্ভাবস্থায় উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন এই পোস্টে। একজন গর্ভবতী মহিলার প্রথম তিন মাসে বা শেষের তিন মাসে রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই সময় গর্ভবতী মায়ের মায়েদের অনেক সাবধানতা অবলম্বন করে চলতে হয়। এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়ে ও চিকিৎসা করা যায়। গর্ভাবস্থায় ইমপ্লান্টেশন জনিত কারণে ও রক্তপাত হয়ে থাকে। মায়ের পেটে যখন ধোন বড় হয় তখন জরায়ুতে প্রথমবারের মতো জায়গা করে এবং সেই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ইমপ্লান্টেশন। ইমপ্লান্টেশন এর সময় জরায়ু পথে হালকা রক্তপাত হতে পারে।

জরায়ু পথে যদি আপনার হালকা রক্তপাত হয় তাহলে আপনি অবশ্যই প্রেগনেন্সি টেস্ট করবেন। সাধারণত গর্ভধারণের ২৮ সপ্তাহের মধ্যে যদি গর্ভে শিশুর মৃত্যু হয় তাহলে সেটাকে গর্ভপাত বলে। আর সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো প্রায় ক্ষেত্রেই এই সময় গর্ভপাত আটকানো সম্ভব হয় না। আর এক্ষেত্রে গর্ভপাতের প্রধান লক্ষণ হল যোনিপথ দিয়ে রক্তপাত হওয়া। এজন্য প্রথমে আপনাকে রক্তপাতের লক্ষণগুলো নির্বাচন করতে হবে। যদি সে কারণগুলো গুরুতর হয় তাহলে অবশ্যই আপনি চিকিৎসার ব্যবস্থা নিবেন। সম্ভব হলে হাসপাতালে ভর্তি থেকে এরকম সমস্যার চিকিৎসা করতে হবে।

গর্ভাবস্থায় বিশ্রাম নেওয়া

গর্ভাবস্থায় বিশ্রাম নেওয়া গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই জরুরী। গর্ভকালীন সময়ে বিশ্রাম নেওয়া মা ও শিশুর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই সময়ে শরীরে অতিরিক্ত চাপ পড়ে এবং মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য ঘুম এবং সঠিক যত্ন নেওয়াটা প্রয়োজন। একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য প্রতিনিয়ত ঘুমানো উচিত। কারণ একজন গর্ভবতী মায়ের পর্যাপ্ত ঘুম মা ও শিশুর জন্য খুবই কার্যকরী। কারণ সারা দিনের ক্লান্তি এবং মানসিক চাপ কে দূরে রাখতে দৈনিক সার্থকে নয় ঘন্টা ঘুমানো উচিত। গর্ভাবস্থায় বিশ্রাম নেওয়ার কিছু নিয়ম দেওয়া হলো :

  • পর্যাপ্ত বিশ্রামঃ একজন গর্ভবতী মায়ের দিনে কমপক্ষে সাত থেকে নয় ঘন্টা ঘুমানো উচিত। গর্ভবতী মাকে অবশ্যই এই বাম দিকে ফিরে শোয়া ভালো। কেননা এভাবে স্মরণ করলে রক্ত সঞ্চালন সহজ করে এবং গর্ভের শিশুর জন্য পুষ্টি প্রদান করে।

  • বিশ্রামের ধরনঃ গর্ভকালীন সময়ে শারীরিক কাজের সময় অবশ্যই বিরতি নেওয়া বা বসা উচিত। এ সময় ভারী কাজ এড়িয়ে চলা এবং বেশি সময় দাঁড়িয়ে না থাকা।

  • মানসিক বিশ্রামঃ গর্ভকালীন সময়ে মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকা শ্রেয়। এই সময় পরিবারের সাথে বেশি সময় কাটানো এবং নেতিবাচক চিন্তা থেকে ইতিবাচক চিন্তা করা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

  • ব্যথা অনুভব করলে বিশ্রামঃ গর্ভকালীন সময়ে অনেকের পিঠে ব্যথা হতে পারে। তবে এ সময় আরামদায়ক স্থানে বসা এবং পা উঁচু করে বিশ্রাম নেওয়া। এছাড়া খুব বেশি সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।

  • চিকিৎসকের পরামর্শঃ গর্ভকালীন সময়ের যদি আপনার যোনিপথে হালকা রক্ত দেখা দেয় তাহলে আপনি অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বিশেষভাবে বিশ্রাম নেওয়ার প্রয়োজন। তাহলে রক্তপাত বন্ধ হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা 

গর্ভাবস্থায় এমন অনেক প্রকার খাবার আছে যেগুলো গ্রহণ করার ফলে গর্ভপাত হতে পারে। এছাড়া এমন কিছু খাবারের ফলে যোনিপথে রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এসব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য গর্ভাবস্থায় অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। গর্ভের শিশুর বৃদ্ধির জন্য গর্ভবতী মাকে অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। কেননা পুষ্টিকর খাবার গর্ভের শিশু এবং মা উভয়কে সুস্থ রাখে এবং শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় রক্তপাত বন্ধের জন্য যেসব পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা উচিত চলুন সেগুলো জেনে নি।

সুষম খাবার 

সুষম খাবারের মধ্যে রয়েছে চর্বি, প্রোটিন, ভিটামিন, এবং খনিজ উপাদান। গর্ভাবস্থায় সুষম খাবারের মধ্যে এই সব উপাদান গুলো থাকা প্রয়োজন। সুষম খাবারের মধ্যে প্রধান কিছু খাদ্য দ্রব্য রয়েছে। যেগুলো হলো কার্বোহাইড্রেট। কার্বোহাইড্রেট খাবারের মধ্যে রয়েছে চাল, রুটি, আলু ইত্যাদি প্রয়োজনীয় খাবার। প্রোটিন খাবারের মধ্যে রয়েছে ডিম, মুরগী,মাছ, মটরশুঁটি,ছোলা, ডাল ইত্যাদি। চর্বি জাতীয় খাবারের মধ্যে রয়েছে অলিভ অয়েল,বাদাম,অ্যাভোকাড।

গর্ভাবস্থার পুষ্টি 

গর্ভাবস্থায় খাবারের মধ্যে অবশ্যই কিছু গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান যুক্ত খাবার রাখা উচিত। যেমন

  • ফলিক অ্যাসিড ( ভিটামিন বি৯)ঃ ফলিক এসিড শিশুর মস্তিষ্ক ও মেরুদন্ডের সঠিক বিকাশে সাহায্য করে। এছাড়া পালং শাক,ব্রকলি,ডিম,দানা শস্য ইত্যাদি খাদ্যগুলো বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

  • আয়রনঃ গর্ভাবস্থায় অবশ্যই শরীরে আয়রনের প্রয়োজন রয়েছে। আইরন এমন একটি উৎস যেটি সবথেকে হিমোগ্লোবিন বাড়ায় এবং রক্তস্বল্পতা দূর করে। আয়রন জাতীয় খাবার হলো লাল মাংস,পালং শাক,ডাল, আখরোট ইত্যাদি। 

  • ভিটামিন ডিঃ ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণ ক্ষমতা বাড়ায়। ডিমের কুসুম, মাশরুম,সূর্যালোক ইত্যাদিতে রয়েছে ভিটামিন ডি। যা গর্ভাবস্থায় শরীরে জন্য বেশ উপযোগী।

  • ক্যালসিয়ামঃ গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের জন্য শরীরে ক্যালসিয়ামের গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ ক্যালসিয়াম মা ও শিশুর হার ও দাঁতের গঠন নিশ্চিত করে। দুধ, দই, চিজ,ছোট মাছ ইত্যাদিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম।

  • ফাইবারঃ গর্ভকালীন সময়ে ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। সবজি, ফল,গোটা শস্য ইত্যাদিতে রয়েছে ফাইবার।

  • ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডঃ গর্ভাবস্থায় শিশুর মানসিক বিকাশ মস্তিষ্ক ও চোখের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণভাবে ভূমিকা রাখে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড। সামুদ্রিক মাছের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে। এছাড়া আখরোট, চিয়া সিড ইত্যাদিতে রয়েছে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড।

পর্যাপ্ত পানি পান করা

গর্ভকালীন সময়ে একজন গর্ভবতী মায়ের পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা উচিত। দৈনিক ৮ থেকে ১০ গ্লাস অন্তত পানি পান করতে হবে। ফলের রস ডাবের পানি এবং সবজির সুপ বা আমিসের সুপ খেতে পারেন যা শরীরকে হাইড্রেট করে রাখতে সাহায্য করবে।

যেসব খাবার খাওয়া যাবেনা 

গর্ভকালীন সময়ে এমন কিছু খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে যেগুলো খাওয়ার ফোনের গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সাধারণত ২৮ সপ্তাহের মধ্যে অর্থাৎ তিন মাসের মধ্যে গণপথ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। এ সময় এমন কিছু খাবার থেকে বিরত থাকা উচিত। যেমন পেঁপে, বেশি টক, আনারস ইত্যাদি খাবার যেগুলো গর্ভের ভ্রম রক্ত থাকা অবস্থায় গলিয়ে দিতে পারে। এছাড়া ও কাচা বা আধাভেজা মাছ এবং মাংস, অতিরিক্ত লবণ যুক্ত খাবার, প্রসেসর খাবার, প্রতিদিন চা বা কফি, অ্যালকোহল এবং ধূমপান এসব সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলা উচিত।

নিয়ম মত খাবার

গর্ভকালীন সময়ে অবশ্যই সময়মতো খাবার খেতে হবে। প্রতিনিয়ত অন্তত দিনে অল্প পরিমাণে পাঁচ থেকে ছয় বার খাবার খেতে হবে। সকালবেলার খাবার কখনোই বাদ দেওয়া যাবে না। এছাড়া ভারি খাবার রাতে খাওয়ার আগে এড়িয়ে চলতে হবে। আমি যদি এই সময়ে সময় মতন নিয়ম করে খাবার খান তাহলে গর্ভপাত অনেকাংশে কমে যাবে।

গর্ভাবস্থায় মানসিক চাপ মুক্ত থাকা 

গর্ভাবস্থায় মানসিক চাপ মুক্ত থাকা মা ও শিশু উভয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় মানুষের চাপ শারীরিক এবং মানসিকভাবে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। গর্ভকালীন সময়ে আপনি যদি এই সব মানুষের চাপ তাহলে আপনার শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মায়েদের অবশ্যই মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ঘুম ও বিশ্রাম এবং নেতিবাচক চিন্তা থেকে ইতিবাচক চিন্তা করা জরুরী। কিভাবে মানসিক চাপ কমানো যায় সে বিষয়ে চলুন জেনে নিই।

গর্ভাবস্থায়-রক্তপাত-বন্ধের-উপায়-জানুন

  •  বিশ্রাম ও ঘুমঃ গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রামের প্রয়োজন। একজন গর্ভবতী মায়ের দৈনিক সাত থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। এতে শরীরের উপর থাকা ক্লান্তি বা মানসিক চাপ দূর হবে।
  • ইতিবাচক ভাবনাঃ গর্ভকালীন সময়ে নিজের এবং শিশুর ভালো দিক বিবেচনা করে সব সময় ইতিবাচক ভাবনা রাখতে হবে। এছাড়া পরিবার এবং বন্ধু-বান্ধবের সাথে ইতিবাচক সময় কাটাতে হবে।

  • যোগ ও শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামঃ গর্ভকালীন সময়ে আপনি যদি নিয়মিত যোগ ও শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে পারেন তাহলে আপনার মানসিক চাপ কমতে পারে। আমি তো দীর্ঘ শ্বাস নেওয়ার প্রচেষ্টা করতে থাকুন। এতে আপনার মানসিক চাপ কমবে।

  • পুষ্টিকর খাবারঃ গর্ভাবস্থায় অবশ্যই আপনি সুষম খাদ্য খাবেন। কেননা পুষ্টিকর খাবার শিশুর মস্তিষ্ককে সুস্থ এবং শরীরকে স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত মিষ্টি জাতীয় খাবার কে পরিহার করুন।

  • মানসিক সমর্থনঃ গর্ভকালীন সময়ে পরিবার থেকে আপনি অবশ্যই মানসিক সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করুন। কোন বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা করলে সেটা অবশ্যই পরিবারের সাথে শেয়ার করুন।

  • পছন্দের কাজঃ আপনি যে সব ধরনের কাজ করতে পছন্দ করেন সেগুলো অবশ্যই করুন। যেমন বই পড়া গান শোনা বা ছবি আঁকা ইত্যাদি কাজগুলো করে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। এসব কাজ আপনাকে আনন্দ দেয় সেসব কাজগুলো করার চেষ্টা করুন।

  • চিকিৎসকের পরামর্শঃ গর্ভকালীন সময়ে অবশ্যই আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলবেন। এই সময় আপনার বিভিন্ন কারণে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা প্রয়োজন হতে পারে। এজন্য আপনি স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলুন।

  • পরিবেশের পরিবর্তনঃ গর্ভাবস্থায় যদি আপনার মানসিক চাপ বাড়ে তাহলে সেটি কমানোর জন্য প্রকৃতির কাছে সময় কাটান। ধীরে ধীরে হাঁটতে পারেন বা ফুল গাছের যত্ন নিতে পারেন।

  • ইন্টারনেটের ব্যবহার কমিয়ে রাখুনঃ বর্তমান সময় যেহেতু ইন্টারনেটের সময়। তাই আপনি অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। নেতিবাচক এমন কিছু খবর বা বিষয় থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।

  • গর্ভাবস্থার জন্য প্রস্তুতঃ জন্মের পর শিশুর কিভাবে যত্ন নিবেন সে বিষয়ে ধারণা করে রাখুন। মানসিক প্রশান্তি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্রাক- প্রসব ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় ওষুধ গ্রহণে সাবধানতা 

গর্ভাবস্থায় যদি সামান্য অসুখ ও হয় তবে সে কি অনেক বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাছাড়া গর্ভকালীন সময়ে নারীদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। শরীরে বিভিন্ন অসুখ হতেই থাকে। সে সময় গর্ভবতী নারীরা বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খেয়ে থাকেন। তবে সে ক্ষেত্রে এমন কিছু ওষুধ রয়েছে যেগুলো খাওয়ার ফলে গর্ভের শিশুর মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তাই গর্ভ অবস্থায় কোন ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে। যেসব ওষুধ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পূর্ণ সেগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

  • চিকিৎসকের পরামর্শঃ গর্ভাবস্থায় যে কোন ধরনের ওষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সর্দি কাশি কিংবা জ্বর হলেও ওষুধ নিজে থেকে গ্রহণ করা যাবে না এক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসককে দেখিয়ে দিতে হবে।

  • ওষুধের শ্রেণীবিন্যাসঃ ওষুধের নিরাপত্তা ভিত্তিতে শ্রেণীবিন্যাস করা হয়ে থাকে। কিছু শ্রেণির ওষুধ গর্ভাবস্থার জন্য নিরাপদ। যেমন A ও B শ্রেণী। আর কিছু শ্রেণীর ঔষধ চিকিৎসকের নির্দেশ ব্যবহার করা উচিত।

  • হোমিওপ্যাথি ওষুধঃ প্রাকৃতিক কিংবা হোমিওপ্যাথিক ওষুধ ব্যবহারেও সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। এক্ষেত্রে অনেকে মনে করেন যে হোমিওপ্যাথি ওষুধে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। কিন্তু এটাই সম্পূর্ণ ভুল ধারণা হতে পারে। কারণ হোমিওপ্যাথি ওষুধেও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকতে পারে তাই এগুলো ব্যবহার করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

  • গর্ভকালীন ধাপ অনুযায়ী ঔষধঃ গর্ভকালীন সময়ে প্রথম তিন মাসের ওষুধ জীবনের ফুটে অবশ্যই সতর্ক থাকা প্রয়োজন। শিশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গঠিত হয়।

  • মাঝবতী সময়ঃ মাঝবতী সময়ে কিছু ওষুধ নিরাপদ হতে পারে।

  • শেষ তিন মাসঃ গর্ভাবস্থায় শেষ তিন মাসের শিশুর বৃদ্ধি ও প্রসবের জন্য অবশ্যই ওষুধ নির্বাচন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে।

  • জরুরি অবস্থায় ঔষধঃ জরুরী প্রয়োজনে যেমন ইনফেকশন বা রক চাপের মতো অবস্থায় অবশ্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কেননা এ সময় স্মৃতিসৌধ কিছু ওষুধ দিতে পারে জামা ও শিশুর জন্য ঝুঁকিমুক্ত। গর্ভাবস্থায় নিজের ও শিশুর সুস্থতার জন্য যে কোন ওষুধ গ্রহণের আগে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া 

গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা গর্ভকালীন সময়ে মায়ের শারীরিক অবস্থা এবং শিশুর সঠিক বৃদ্ধির জন্য সঠিকভাবে যত্ন এবং চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। গর্ভের শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য অবশ্যই সঠিক ঔষধ নির্বাচন করতে হবে। আর সেজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ গ্রহণ করা উচিত নয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। আপনি যদি চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ না করেন তাহলে মা ও শিশুর জন্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি হতে পারে। তাই কিভাবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কারণ উল্লেখ করা হলোঃ

  • সঠিক ঔষধ বাছাইঃ গর্ভকালীন সময়ে যেকোনো ওষুধ নিরাপদ নয়। এক্ষেত্রে যে কোন ওষুধ শিশুর জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মা ও শিশুর জন্য ঔষধ গ্রহণ করতে হবে।

  • পরীক্ষা ও নিরীক্ষাঃ গর্ভকালীন সময়ে অবশ্যই আল্ট্রাসাউন্ড, ব্লাড টেস্ট এবং ইউরিন টেস্ট এর মত বিভিন্ন পরীক্ষা করতে হবে। এসব পরীক্ষা গুলো অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করতে হবে। এগুলো করার মাধ্যমে মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের অবস্থা সম্পর্কে জানা যাবে এবং শিশুর বর্তমান অবস্থা সনাক্ত করা যাবে।

  • সন্তানের বিকাশঃ গর্ভের সন্তানের বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। এর মাধ্যমে চিকিৎসক ও শিশুর ওজন হার্টবিট ও অন্যান্য বিষয়ের সম্পর্কে সঠিকভাবে ধারণা পেয়ে যান।

  • জটিলতা গর্ভাবস্থারঃ গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে হলো ডায়াবেটিস,উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েড ইত্যাদি। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী এগুলো শনাক্ত করার পর সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে।

  • দৈনন্দিন জীবনের খাদ্যাভাসঃ গর্ভকালীন সময়ে অবশ্য শুশুভ খাবার গ্রহণ করা উচিত। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান এবং বিশ্রাম এছাড়াও ব্যায়ামের মাধ্যমে চিকিৎসক বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এগুলো মা ও শিশুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

  • স্বাস্থ্য সুরক্ষাঃ গর্ভকালীন সময়ে মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ মা ও শিশুর স্বাস্থ্যের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা অনুযায়ী চলতে হবে।

  • প্রসব পরিকল্পনাঃ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী শারীরিক অবস্থার উন্নতি স্বাভাবিক বা অপারেশনের মাধ্যমে প্রসব হবে কিনা সে বিষয়ে পরিকল্পনা করে নিতে হবে। আর তার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে হবে। এসব কিছু আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করবেন।

গর্ভাবস্থায় শারীরিক পরীক্ষা করা

গর্ভকালীন সময়ে অবশ্যই শারীরিক পরীক্ষা করা উচিত। এসময় গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্য এবং গর্ভের শিশুর সঠিক বিচার সম্পর্কে নিশ্চিত হতে অবশ্যই তিন মাস পর পর শারীরিক পরীক্ষা বা আল্ট্রাসনোগ্রাফ করা প্রয়োজন। নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা করার মাধ্যমে গর্ভের বিভিন্ন পর্যায় সম্পর্কে ধারণা নিয়ে চিকিৎসক চিকিৎসা দিতে পারেন। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য খুবই সুবিধা হয়। গর্ভের শিশু কোন পর্যায়ে রয়েছে সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তাহলে বোঝা যায় যে গর্ভাবস্থায় রক্তপাত কিভাবে বন্ধ করা যায়। গর্ভাবস্থায় শারীরিক পরীক্ষাগুলো হল :

গর্ভাবস্থায়-রক্তপাত-বন্ধের-উপায়-জানুন

  • প্রথম ত্রৈমাসিক পরীক্ষাঃ গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসের শুরুতে মায়ের শরীরের পরীক্ষা করা উচিত। ব্লাড টেস্ট, ইউরিন টেস্ট, আল্ট্রা সাউন্ড প্রভৃতি পরীক্ষার মাধ্যমে গর্ভের সন্তানের শারীরিক বিকাশ সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়। ব্লাড টেস্ট করার মাধ্যমে রক্ত শূন্যতা ব্লাড গ্রুপ এবং ফ্যাক্টর নির্ধারণ সম্পর্কে জানা যায়। প্রথম তিন মাসের শুরুতে অবশ্যই এই পরীক্ষাগুলো করতে হবে।

  • ২য় ত্রৈমাসিক পরীক্ষাঃ দ্বিতীয় ছয় মাসের সময় মায়ের স্বাস্থ্যের পরিবর্তন ঘটতে পারে। এ সময় আরো কিছু পরীক্ষা করা প্রয়োজন। যেমন ডায়াবেটিস পরীক্ষা, আল্ট্রা সাউন্ড এবং রক্ত পরীক্ষা। এই পরীক্ষাগুলো করার মাধ্যমে শিশুর সঠিক বিকাশ এবং শিশু লিঙ্গ মস্তিষ্ক এবং হৃদযন্ত্রের গঠন সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।

  • তৃতীয় ত্রিমাসিক পরীক্ষাঃ গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে কিছু পরীক্ষা করা উচিত। শিশুর ওজন এবং রক্তচাপ নিশ্চিত করা। শিশুর নড়াচড়া পর্যবেক্ষণ, আল্ট্রাসাউন্ড, বিপি পরীক্ষা এবং সার্ভিক্স পরীক্ষা ইত্যাদি পরীক্ষার মাধ্যমে শিশুর অবস্থান এবং গর্ভকাল নির্ধারণ,প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ নিশ্চিত করা সম্ভব।

গর্ভাবস্থায় প্রাথমিক চিকিৎসার পরামর্শ 

গর্ভাবস্থায় অবশ্যই প্রাথমিক চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে। কেননা মা এবং গর্ভের শিশুর স্বাস্থ্যের উপর বিভিন্ন প্রভাব পড়তে পারে। তাই যে কোন সমস্যা দেখা দিলে সে ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজন হয়। তবে যদি কোন গুরুত্বের সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। গর্ভাবস্থায় কিছু প্রাথমিক চিকিৎসা রয়েছে। সেসব প্রাথমিক চিকিৎসা গুলো হল :

  • বমি বমি ভাবঃ গর্ভকালীন সময়ে বমি হওয়াটা স্বাভাবিক বিষয়। তবে এজন্য কিছু প্রাথমিক ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। যেমন সকালে খালি পেটে না থাকা, আদার টুকরো চিবিয়ে খাওয়া, এবং ঠান্ডা পানি বা লেবু পানি পান করা। তাহলে বমি আসবে না। তবে সমস্যা যদি গুরুতর হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

  • পেট জ্বালাপোড়াঃ গর্ভাবস্থায় বিভিন্ন কারণে পেটে জ্বালাপোড়া হতে পারে। যেসব কারণে পেটে জ্বালাপোড়া হয় তাহলেও অতিরিক্ত চর্বিযুক্ত খাবার, খাবার খাওয়ার পর শুয়ে থাকা, ঠান্ডা দুধ বা দই খাওয়া ইত্যাদি খাবার খেলে পেটে জ্বালাপোড়া হতে পারে তাই এগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।

  • কোষ্ঠকাঠিন্যঃ গর্ভাবস্থায় অনেকের কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে। এজন্য আপনাকে অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। এবং আঁশযুক্ত খাবার যেমন শাক সবজি ফলমূল এবং হালকা ব্যায়াম করতে হবে। এসব প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে আপনি সুস্থ থাকবেন। যদি অবস্থা খারাপ হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন।

  • মাথা ব্যথা ও কোমর ব্যথাঃ গর্ভকালীন সময়ে কোমর ও মাথা ব্যথা হয়ে থাকে। এজন্য প্রাথমিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। কোমর ব্যথার জন্য সোজা হয়ে বস বুঝতে হবে এবং শোয়ার সময় বালিশ ব্যবহার করতে হবে। এক্ষেত্রে হালকা ব্যায়াম এবং ভারী কাজ এড়িয়ে চলতে হবে। মাথা ব্যথার জন্য অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম এবং চাপমুক্ত থাকতে হবে। এ সময় হালকা খাবার এবং রক্তচাপ পরীক্ষা করুন। ঘরে শান্ত পরিবেশে থাকুন, যদি সমস্যা দীর্ঘতম হয় তাহলে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শের করুন।

  • জ্বর এবং পা ফুলে যাওয়াঃ গর্ভকালীন সময়ের জোয়ার এবং পা ফুলে যাওয়া একটি স্বাভাবিক সমস্যা। প্রাথমিক চিকিৎসা অনুযায়ী প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী হতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান এবং বিশ্রাম করুন। পা ফোলার জন্য পা উঁচু করে রাখতে হবে এবং বেশি সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হবে না। লবণযুক্ত খাবার কম খাবেন এবং প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করুন। সমস্যা গুরুতর হলে অবশ্যই চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করবেন।

মন্তব্যঃ গর্ভাবস্থায় রক্তপাত বন্ধের উপায়

গর্ভাবস্থায় রক্তপাত বন্ধের উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ও তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আজকের পোস্টে। গরম অবস্থায় রক্তপাত বন্ধ করার জন্য বিভিন্ন উপায় এবং গর্ভাবস্থায় কিভাবে চললে গর্ভবতী মায়ের ও শিশুর শারীরিক বিকাশ ঘটতে পারে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। উপরে উল্লেখিত বিস্তারিত আলোচনা থেকে গর্ভপাত আটকানো এবং রক্তপাত বন্ধের উপায় সম্পর্কে জানতে পারবেন। আজকের পোস্ট থেকে আশা করি আপনি উপকৃত হবেন। গর্ভাবস্থায় সাবধানতা অবলম্বন করুন এবং বেশি সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলুন। আমাদের ওয়েবসাইটের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url