গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা

গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন আজকের পোস্টে। আপনি গর্ভবতী আপনি মা হতে চলেছেন,আপনাকে অভিনন্দন। এইজন্য আপনার মনের মধ্যে আপনার অনাগত সন্তান নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন জাগতে পারে। এমন যে আপনার প্রথম তিন মাসের করণীয় কি।

গর্ভাবস্থায়-প্রথম-তিন-মাসের-খাবার-তালিকা

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সকল ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াটা জরুরী। তবে গর্ভকালীন সময়ে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গর্ভাবস্থায় আপনার সুষম খাবার খাওয়া, আপনার সন্তানকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে এবং সঠিক ওজন বজায় রাখতে ও সাহায্য করে। তাই চলুন জেনে নেই প্রথম তিন মাসে আপনি কি করবেন বা কি খাবেন।

পেজ সূচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা গুলো হলোঃ

গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা 

গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন আজকের এই পোস্টে। আপনার গর্ব অবস্থায় প্রথম তিন মাসের খাবার আপনার শরীর স্বাস্থ্যের উপর অনেক বেশি নির্ভর করে। এই সময় আপনার শরীরের ক্যালরির চাহিদা বেশ কিছু জিনিসের উপর বা শারীরিক পরিশ্রমের উপর নির্ভর করে। আপনার শরীরের ওজন যদি আনুমানিক অনেক বেশি হয় তাহলে খাবারের পরিমাণ কমিয়ে ব্যায়ামের পরিমাণ বাড়াতে হবে। ব্যায়াম করে আপনার ওজন স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসার চেষ্টা করতে পারেন।

আপনার শরীরের ওজন যখন কমতে থাকবে তখন ব্যায়ামের পরিমাণও কমিয়ে নিয়ে খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে নিবেন। তবে অবশ্যই এই সব বিষয়ে একজন ডায়েটিশিয়ান এর পরামর্শ নিবেন। একজন ডায়েটিশিয়ান আপনার খাবার তালিকা বিশেষভাবে প্রস্তুত করে দিবেন। গর্ভবতী মায়ের জন্য সারাদিনের একটি খাবার তালিকা প্রয়োজন রয়েছে। যে তালিকায় থাকবে ১৮০০ ক্যালোরি। আপনার শরীর স্বাস্থ্যের উপর বৃদ্ধি করে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন হালকা ব্যায়াম করেন এরকম মহিলার জন্য এই খাবার তালিকাটি প্রস্তুত করা হলোঃ

খাবারের নাম পরিমাণ
ভাত ৫০০-৬০০ গ্রাম
মাছ/ মাংস ৫০ গ্রাম
ফল ও সবজী ২৫০ গ্রাম
সবুজ ও লাল শাক ২৫০-৩৭৫ গ্রাম
ডাল ৫০০ গ্রাম
ডিম ১-২ টি
দুধ ১ গ্লাশ/২৫০ গ্রাম

গর্ভাবস্থার প্রথম সময়ের লক্ষণ এবং উপসর্গ 

গর্ভাবস্থার প্রথম সময়ে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। যে সকল বিবাহিত মহিলাদের নিয়মিত পিরিয়ড হয় তাদের যদি হঠাৎ করে পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায় তাহলে বুঝতে হবে এটি গর্ভাবস্থার প্রথম লক্ষণ। এরকমটা হলে আপনি অবশ্যই পরীক্ষা করে নিতে পারেন। এরপর আপনার আরো কিছু লক্ষণ দেখা যেতে পারে। যেমন গর্ভকালীন সময়ের প্রথম দিকে বমি বমি ভাব, ঘনঘন প্রস্রাব, অনেক বেশি ক্লান্তি ভাব ইত্যাদি লক্ষণ গুলো আপনার মধ্যে দেখা দিতে পারে। প্রথম তিন মাসে যে সব লক্ষণ আপনার মধ্যে দেখা দিবে সেগুলো হলঃ
  • বমি বমি ভাব বা বমি 
  • ঘনঘন প্রস্রাব এর চাপ 
  • দ্রুত ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস পাওয়া 
  • মেজাজ খিটখিটে হওয়া 
  • স্তনের পরিবর্তন আসা 
  • অল্প পরিশ্রমে বেশি ক্লান্ত হয়ে যাওয়া 
  • হঠাৎ হঠাৎ মাথা ব্যথা করা
  • বুক জ্বালাপোড়া করা 
  • পায়ে খিল ধরে থাকা 
  • পিঠের নিচের দিকে ব্যথা অনুভব হওয়া 
  • কিছু প্রিয় খাবারের প্রতি বেশি আকর্ষণ সৃষ্টি হওয়া 
  • আবার কিছু খাবারের প্রতি অপছন্দ তৈরি হওয়া 
  • কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া
গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে এসব লক্ষণ গুলো দেখা দিতে পারে। এ সময় আপনার অস্বস্তিকর লাগতে পারে। আর এই অস্বস্তি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আপনি স্বাস্থ্যসেবা প্রধান কারীর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়া এর থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করতে পারেন। আপনার হাতের কাছে থাকা জিনিসগুলো দিয়েই আপনি এই সব অস্বস্তিকর বিষয়গুলো থেকে মুক্তি পাবেন। যেমন আপনার যদি বমি বমি ভাব হয় তাহলে আদাবা কেন মিল খাওয়ার চেষ্টা করুন।

এছাড়া যে সময় আপনার পায়ে খিল ধরে থাকবে সে ক্ষেত্রে আপনি ক্যালসিয়াম নিয়ে দেখতে পারেন। এতে আপনি বেশ উপকার পাবেন। এই সময় আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। কোষ্ঠকাঠি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলুন। এবং আপনার খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনুন। এগুলো তো যদি কোষ্ঠকাঠিন্য না কমে তাহলে ইসবগুলের ভুষি পানিতে ভিজিয়ে দুধ দিয়ে খেতে পারেন। এতে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে যাবে। আপনি গর্ভকালীন সময়ে আপনার স্বাস্থ্যকর খাবার এবং  নিয়মিত অনুশীলন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো আপনি যতক্ষণ করতে পারবেন ততক্ষণ অব্দি আপনার শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। এর পাশাপাশি পুষ্টিকর ও সুষম খাবার গ্রহণ করুন।

গর্ভাবস্থায় সুষম খাবার খাওয়া

গর্ভাবস্থায় সুষম খাবার খাওয়া উচিত। কেননা সুষম খাবার গর্ভাবস্থায় শরীরে জন্য খুবই উপকারী। মা ও সন্তানকে সুস্থ সবল রাখতে সুষম খাবারের প্রয়োজন রয়েছে। সুষম খাবার দেহে পুষ্টি যোগায়, পুষ্টিহীনতা দূর করে। একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য প্রতিদিনের খাবার তালিকায় সুষম খাবার রাখা উচিত। গর্ভাবস্থায় অবশ্যই সুষম খাবার খেতে হবে। সুষম খাবারের রয়েছে ফাইবার এবং বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান। যেসব উপাদান গুলো গর্ভাবস্থায় মা ও সন্তানের শরীর ও স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। সন্তানের সঠিক ওজন ধরে রাখে এবং মেধা বিকাশে সহায়তা করে। কিছু সুষম খাবার তালিকা হলোঃ
  • ফলমূলঃ গর্ভাবস্থায় অবশ্যই ফলমূল খাওয়া উচিত। টাটকা এবং শুকনো যে কোন ফলই গর্ভাবস্থায় উপকারী। আপনি অবশ্যই আপনার খাবার প্লেটে টাটকা ফলমূল রাখবেন।
  • আমিষঃ মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, বাদাম ইত্যাদি খাবারগুলোতে অনেক পরিমাণে আমিষ রয়েছে। আপনার প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় এসব আমি জাতীয় খাবার গুলো যোগ করুন।
  • শাকসবজিঃ শাকসবজি হলো একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই উপকারী একটি খাবার। টাটকা এবং গাড়ো সবুজ সবজিগুলো খাওয়ার চেষ্টা করবেন। যেগুলোতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ রয়েছে।
  • শস্যঃ শস্য জাতীয় খাবারের মধ্যে ওটস, বার্ল, কাউনের চাল, ঢেঁকি ছাঁটা চাল, এবং লাল আটা ইত্যাদি খাবারগুলো প্রক্রিয়াজাত নয়। এ খাবারগুলো সরাসরি শস্য থেকে আসে। আপনার খাবার তালিকায় এসব খাবারগুলো রাখতে পারেন।
  • তেল এবং স্নেহ জাতীয় খাদ্যঃ তেল জাতীয় ও স্নেহ জাতীয় খাবার গুলো হলো মূলত উদ্ভিজ্জ উৎস। যে সব খাবারের স্বাস্থ্যকর ফ্যাট পাওয়া যায় সেগুলো হলো এমন কিছু মাছ, বাদাম এবং অ্যাভোকাডো। স্নেহ জাতীয় খাবারের মধ্যে এই খাবারগুলো খাওয়া সীমিত আকারে রাখতে হবে।

গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে কি কি খাওয়া যাবে না 

গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা হিসেবে যেসব খাবার খাওয়া যাবেনা সেগুলো থেকে দূরে থাকায় অনেক ভালো। এমন অনেক কিছু খাবার রয়েছে যেসব খাবারে গর্ভবতী মায়েরা অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। গর্ভকালীন সময়ে সেসব খাবার খেলে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। তাই এমন কিছু খাবার রয়েছে যেগুলো আপনাকে এড়িয়ে চলতে হবে। গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত কোন খাবার খাওয়া উচিত নয়। এমন খাবার খেতে হবে যেগুলোতে পুষ্টিগুণ রয়েছে। চলুন জেনে নিই কোন খাবারগুলো গর্ভাবস্থায় খাওয়া উচিত নয়।

গর্ভাবস্থায়-প্রথম-তিন-মাসের-খাবার-তালিকা

  • গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত তেল চর্বিযুক্ত খাবার থেকে বিরক্ত থাকতে হবে। এছাড়া চিনি যুক্ত খাবারও খাওয়া উচিত নয়।
  • গর্ভাবস্থায় মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা সেসব খাবারের বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে।
  • এমন খাবার যে ঠিক কাঁচা এবং পুরোপুরি রান্না হয়নি সে খাবার খাওয়া ঠিক নয়। কেননা এই খাবারের  পরজীবী এবং সালমোনিলা এর মতো ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে।
  • কাঁচা মাছ খাওয়া উচিত নয়। কেননা কাঁচা মাছের রেসিপি ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী। তাই এরকম জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকাই ভালো।
  • কাঁচা খাদ্যশস্য ও শিম, কাঁচা মুলা এবং সিমের বীজ ইত্যাদি খাবারগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা এতে সালমানিলা ও ই কলার মতো ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয়। যেটি শরীরের জন্য একেবারে উচিত নয়।
  • ডিম, কাঁচা বা কম সিদ্ধ ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এরকম ডিমের রয়েছে ব্যাকটেরিয়া যা অনেক ক্ষতি করতে পারে।

গর্ভাবস্থায় শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া 

গর্ভাবস্থায় অবশ্যই শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। আমাদের শরীরে যে শক্তি রয়েছে তার প্রধান উৎস হলো শর্করা জাতীয় খাদ্য। শর্করা জাতীয় খাদ্যে রয়েছে ভিটামিন ও পুষ্টিগুণ। তাই গর্ভকালীন সময়ে শর্করা জাতীয় খাবার মা ও সন্তানের ভিটামিন ক্যালসিয়াম এবং ক্যালরির চাহিদা পূরণ করে। একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতিদিনের খাবার তালিকায় অবশ্যই শর্করা জাতীয় খাবার রাখা উচিত। শর্করা জাতীয় খাবার গর্ভবতী মহিলা ও তার সন্তানের বিভিন্ন সমস্যা থেকে দূরে রাখে। জাতীয় কিছু খাবার হলঃ
  • ফাস্টফুড যেমন নুডুলস ও পাস্তা 
  • আলু 
  • ভাত
  • রুটি
  • ভুট্টা 
  • সিরিয়াল বা কর্ণফ্লেক্স 
  • ওটস 
শর্করা জাতীয় খাবারের মধ্যে প্রক্রিয়াজাতকরণ খাদ্য খাওয়া উচিত। প্রক্রিয়াজাতকরণ খাবারের মধ্যে রয়েছে সাদা চাল ও সাদা আটা। তবে এগুলো খাওয়ার থেকে গোটা শস্যদানা খাবার খাওয়া উচিত। যেমন লাল চাল ও লাল আটা। এছাড়াও সরকার জাতীয় খাবারের মধ্যে আলু খোসা সহ খাওয়া ভালো। এভাবে খেলে খাবারের পুষ্টিগুণ এবং খাবারের আশের পরিমাণ সঠিক থাকে। খাবারের যে আঁশ থাকে সেটি গর্ভকালীন সময়ের কষ্ট কাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। আপনি চাইলে সরকারি জাতীয় খাবারের চাহিদা গোটা শস্য দানা দিয়ে পূরণ করতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে ফল ও শাকসবজি খাওয়া 

গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে কমপক্ষে ৫ থেকে ৬ রকমের ফল ও নানা ধরনের সবজি খাওয়া উচিত। কারণ গর্ভকালীন সময়ে শরীরের জন্য ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের প্রয়োজন হয় অনেক বেশি। আর তাই গর্ভকালীন সময়ে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়াটা উচিত। রঙ্গিন ফলমূল ও শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন থাকে। এটি গর্ভকালীন সময়ে শিশুকে সুস্থ রাখে এবং স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে সহায়তা করে। তাছাড়া বিভিন্ন ফলমূল এবং বিভিন্ন ধরনের শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণে আশ রয়েছে।

আজ জাতীয় খাবারগুলো হজমের জন্য খুবই ভালো এবং গর্ভকালীন সময়ের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। গর্ভকালীন সময়ে আপনি যে ধরনের শাকসবজি ও ফলমূল খাবেন সেগুলো অবশ্যই টাটকা হতে হবে। এসব খাবার কাঁচা কিংবা ফ্রিজের বেশি ঠান্ডা করে খাবেন না। শুকনো এবং টাটকা খাওয়ার চেষ্টা করবেন। তবে এগুলো খাওয়ার আগে অবশ্যই পরিষ্কার করে ধুয়ে নিবেন। কেননা এতে অধিক পরিমাণের রোগ জীবাণুর থাকে, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকারক।

গর্ভাবস্থায় যেসব ধরনের শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া উচিত তার তালিকা হলোঃ

শাকসবজি ফলমূল
মিষ্টিকুমড়া আম
মিষ্টি আলু কলা
টমেটো মালটা
গাজর কমলা
পালং শাক পেয়ারা
মোটর শুটি জাম্বুরা
কাপ্সিকাম বাঙ্গি

গর্ভাবস্থায় প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়া 

গর্ভাবস্থায় প্রোটিন জাতীয় খাবার প্রয়োজন অনুযায়ী খেতে হবে। কেননা আপনার সন্তানের শারীরিক গঠন এবং বৃদ্ধির জন্য গর্ভকালীন সময়ে প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। প্রথম সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে মাছ, মাংস,ডিম,দুধ। এসব খাবারগুলো খাওয়ার আগে অবশ্যই দেখে নিবেন যেন এগুলো ঠিকমতো সিদ্ধ হয়। কারণ আধা সিদ্ধ খাবার গর্ভবতী মা এবং শিশুর জন্য মোটেই ভালো নয়। আধা সিদ্ধ খাবারের জীবাণু প্রবেশ করে। আর এটি খাওয়ার পরে শরীরে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যার ফলে গর্ভপাত হতে পারে। চলুন দেখি নিই কোন খাবার কিভাবে খেতে হবে।
  • মাংসঃ মাংস এমন একটি খাবার যেটিতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে। তবে মাংস যদি আপনি ভুলবশত আধা সিদ্ধ কিংবা কাঁচা খেয়ে ফেলেন তাহলে গর্ব অবস্থায় অনেক ক্ষতি হতে পারে। তাই মাংস খাওয়ার আগে অবশ্যই দেখে নিবেন সিদ্ধ হয়েছে কিনা। খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই সিদ্ধ মাংস খাবেন। আর অবশ্যই রান্নার সময় কম তেল ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন।
  • মাছঃ মাছ হল খুবই প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য। গর্ভকালীন সময়ে আপনি চেষ্টা করবেন প্রতিনিয়ত ২৮০ গ্রাম মাছ খাওয়ার। তাছাড়া সপ্তাহে কয়েক দিন বড় মাছ এবং বাকি কয়েকদিন দেড় থেকে দুই বাটি করে ছোট মাছের তরকারি খাওয়ার চেষ্টা করবেন। এর পাশাপাশি তেলাক্ত মাছ খাওয়ার গর্ভাবস্থায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা তুই লাগতো মেসেজ ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে যা শিশুর যথাসময়ে জন্মানোর জন্য ভূমিকা রাখে। কিছু তৈলাক্ত মাছের নাম হলঃ
  • পুটি মাছ 
  • বাটা মাছ
  • ইলিশ মাছ
  • বাঁশপাতা মাছ 
  • মহা শোল মাছ 
  • চাপিলা  মাছ 
  • দুধঃ গর্ভকালীন সময়ে প্রতিনিয়ত অন্ততপক্ষে এক গ্লাস দুধ খাবেন। কেননা দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্য পুষ্টি। আপনি যদি প্রতিদিন এক গ্লাস করে দুধ পান করেন তাহলে আপনার অনাগত সন্তানের দাঁত ও হাড় গঠনে অধিক পরিমাণে  সহায়তা করে।
  • পানিঃ গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মা ও সন্তানকে সুস্থ রাখার জন্য দিনে অন্ততপক্ষে ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করা প্রয়োজন। কেননা পানি শরীরের জন্য অধিক পরিমাণে উপকারী।

গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তৈরি 

গর্ভবতী মায়ের জন্য প্রথম তিন মাসে সাবধানতা বজায় রেখে খাবার তৈরি করা উচিত। কেননা এমন অনেক সময় আছে খাবারে কোন জীবাণু বা সংক্রামক লাগলে গর্ভবতী মা ও সন্তানের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এইজন্য গর্ভবতী মায়ের খাবার তৈরি করার সময় অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। সতর্ক থাকার জন্য আপনি  যা যা করতে পারেন সেগুলো হলঃ প্রথমে আপনি রান্না করার আগে অবশ্যই ফলমূল বা শাকসবজি পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিবেন। যেন শাকসবজিতে কোন ময়লা বা মাটির কণা না থাকে। রান্না শেষে বা খাওয়ার শেষে থালা বাসন অবশ্যই ভালো করে ভীম রিকুয়েস্ট দিয়ে ধুয়ে নিবেন। এতে করে থালাতে থাকা জীবাণু মরে যাবে।

গর্ভাবস্থায়-প্রথম-তিন-মাসের-খাবার-তালিকা

মাছ মাংস কাটার জন্য অবশ্যই ছুরি বা বটি ব্যবহার করবেন। এগুলো ব্যবহার করার পর পরিষ্কার পানিতে ডিটারজেন্ট কিংবা ভীম লিকুইড দিয়ে ধুয়ে নিবেন। রান্না করা খাবার যদি ফ্রিজে রাখতে চান তাহলে অবশ্যই ঢাকনা ওয়ালা বাটি কিংবা প্যাকেটে সঠিক তাপমাত্রা দিয়ে রাখবেন। ফ্রিজের বের করা খাবার ঠান্ডা কখনোই খাবেন না। সেটা অবশ্যই গরম করে খাবেন। এমনকি ফ্রিজে সংরক্ষণ করা খাবার বেশি দিন রাখবেন না। গর্ভকালীন সময়ে সব সময় চেষ্টা করবেন টাটকা এবং সতেজ খাবার খাওয়া। যেন আপনি এবং আপনার গর্ভের সন্তান দুজনেই সুস্থ থাকতে পারেন।

গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার 

গর্ভকালীন সময়ে অবশ্যই প্রথম তিন মাসে ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। গর্ভাবস্থায় নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার অবশ্যই খাবেন। পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি আপনার শরীরের পুষ্টি উপাদানের চাহিদা গুলো পূরণ হবে। শরীরে পুষ্টি বাধানে পাশাপাশি কিছু অতিরিক্ত পুষ্টি উপাদানের প্রয়োজন রয়েছে। যখন তিন মাস অতিক্রম হয়ে যাবে তখন আপনার শরীরের পুষ্টি উপাদানের জন্য আপনি কিছু ট্যাবলেট খেতে পারেন। যেসব ট্যাবলেট গুলো খেলে আপনার শরীরের ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে।
  • আইরনঃ গর্ভাবস্থার শুরুর ৩ মাস পর থেকে আপনি আয়রন ট্যাবলেট খেতে পারবেন। একি খাওয়া আপনার শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আয়রন ট্যাবলেট গর্ভবতী মায়ের রক্তশূন্যতা দূর করে। তাছাড়া আইরন ট্যাবলেট গর্বের সন্তানের জন্য খুবই ভালো।
  • ক্যালসিয়ামঃ গর্ভধারণের তিন মাসের পর থেকে আপনি নিয়ম করে দুই বেলা ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেতে পারবেন। ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়ার পূর্বে আপনি অবশ্যই খাবার খেয়ে নিবেন। এছাড়াও আরো ভিটামিন ডি ভিটামিন সি সহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে পারবেন।

শেষ কথাঃ গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা 

গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি আজকের আর্টিকেলে। আপনি যদি গর্ভবতী হন তাহলে আপনাকে অভিনন্দন। আপনার গর্ভকালীন সময়ের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান এবং প্রোটিন ও শর্করা সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরিমাণ ও নিয়ম কানুন সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। গর্ভকালীন সময়ে চেষ্টা করবেন এইসব নিয়মকানুন এবং খাবার গুলো খেয়ে মা এবং সন্তানকে সুস্থ রাখার। আশা করি আজকের পোস্টটি আপনার উপকারে আসবে। আরও বিভিন্ন তথ্য সম্পন্ন পোস্ট পেতে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথে থাকুন, ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url