গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন আজকের পোস্টে। আপনি গর্ভবতী আপনি মা হতে চলেছেন,আপনাকে অভিনন্দন। এইজন্য আপনার মনের মধ্যে আপনার অনাগত সন্তান নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন জাগতে পারে। এমন যে আপনার প্রথম তিন মাসের করণীয় কি।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সকল ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াটা জরুরী। তবে গর্ভকালীন সময়ে এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গর্ভাবস্থায় আপনার সুষম খাবার খাওয়া, আপনার সন্তানকে বেড়ে উঠতে সাহায্য করে এবং সঠিক ওজন বজায় রাখতে ও সাহায্য করে। তাই চলুন জেনে নেই প্রথম তিন মাসে আপনি কি করবেন বা কি খাবেন।
পেজ সূচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা গুলো হলোঃ
- গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা
- গর্ভাবস্থার প্রথম সময়ের লক্ষণ এবং উপসর্গ
- গর্ভাবস্থায় সুষম খাবার খাওয়া
- গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে কি কি খাওয়া যাবেনা
- গর্ভাবস্থায় শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া
- গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে ফল ও শাকসবজি খাওয়া
- গর্ভাবস্থায় প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়া
- গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তৈরি
- গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার
- শেষ কথাঃ গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের খাবার তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন আজকের এই পোস্টে। আপনার গর্ব অবস্থায় প্রথম তিন মাসের খাবার আপনার শরীর স্বাস্থ্যের উপর অনেক বেশি নির্ভর করে। এই সময় আপনার শরীরের ক্যালরির চাহিদা বেশ কিছু জিনিসের উপর বা শারীরিক পরিশ্রমের উপর নির্ভর করে। আপনার শরীরের ওজন যদি আনুমানিক অনেক বেশি হয় তাহলে খাবারের পরিমাণ কমিয়ে ব্যায়ামের পরিমাণ বাড়াতে হবে। ব্যায়াম করে আপনার ওজন স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসার চেষ্টা করতে পারেন।
আপনার শরীরের ওজন যখন কমতে থাকবে তখন ব্যায়ামের পরিমাণও কমিয়ে নিয়ে খাবারের পরিমাণ বাড়িয়ে নিবেন। তবে অবশ্যই এই সব বিষয়ে একজন ডায়েটিশিয়ান এর পরামর্শ নিবেন। একজন ডায়েটিশিয়ান আপনার খাবার তালিকা বিশেষভাবে প্রস্তুত করে দিবেন। গর্ভবতী মায়ের জন্য সারাদিনের একটি খাবার তালিকা প্রয়োজন রয়েছে। যে তালিকায় থাকবে ১৮০০ ক্যালোরি। আপনার শরীর স্বাস্থ্যের উপর বৃদ্ধি করে সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন হালকা ব্যায়াম করেন এরকম মহিলার জন্য এই খাবার তালিকাটি প্রস্তুত করা হলোঃ
খাবারের নাম | পরিমাণ |
---|---|
ভাত | ৫০০-৬০০ গ্রাম |
মাছ/ মাংস | ৫০ গ্রাম |
ফল ও সবজী | ২৫০ গ্রাম |
সবুজ ও লাল শাক | ২৫০-৩৭৫ গ্রাম |
ডাল | ৫০০ গ্রাম |
ডিম | ১-২ টি |
দুধ | ১ গ্লাশ/২৫০ গ্রাম |
গর্ভাবস্থার প্রথম সময়ের লক্ষণ এবং উপসর্গ
- বমি বমি ভাব বা বমি
- ঘনঘন প্রস্রাব এর চাপ
- দ্রুত ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস পাওয়া
- মেজাজ খিটখিটে হওয়া
- স্তনের পরিবর্তন আসা
- অল্প পরিশ্রমে বেশি ক্লান্ত হয়ে যাওয়া
- হঠাৎ হঠাৎ মাথা ব্যথা করা
- বুক জ্বালাপোড়া করা
- পায়ে খিল ধরে থাকা
- পিঠের নিচের দিকে ব্যথা অনুভব হওয়া
- কিছু প্রিয় খাবারের প্রতি বেশি আকর্ষণ সৃষ্টি হওয়া
- আবার কিছু খাবারের প্রতি অপছন্দ তৈরি হওয়া
- কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া
গর্ভাবস্থায় সুষম খাবার খাওয়া
- ফলমূলঃ গর্ভাবস্থায় অবশ্যই ফলমূল খাওয়া উচিত। টাটকা এবং শুকনো যে কোন ফলই গর্ভাবস্থায় উপকারী। আপনি অবশ্যই আপনার খাবার প্লেটে টাটকা ফলমূল রাখবেন।
- আমিষঃ মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, বাদাম ইত্যাদি খাবারগুলোতে অনেক পরিমাণে আমিষ রয়েছে। আপনার প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় এসব আমি জাতীয় খাবার গুলো যোগ করুন।
- শাকসবজিঃ শাকসবজি হলো একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই উপকারী একটি খাবার। টাটকা এবং গাড়ো সবুজ সবজিগুলো খাওয়ার চেষ্টা করবেন। যেগুলোতে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ রয়েছে।
- শস্যঃ শস্য জাতীয় খাবারের মধ্যে ওটস, বার্ল, কাউনের চাল, ঢেঁকি ছাঁটা চাল, এবং লাল আটা ইত্যাদি খাবারগুলো প্রক্রিয়াজাত নয়। এ খাবারগুলো সরাসরি শস্য থেকে আসে। আপনার খাবার তালিকায় এসব খাবারগুলো রাখতে পারেন।
- তেল এবং স্নেহ জাতীয় খাদ্যঃ তেল জাতীয় ও স্নেহ জাতীয় খাবার গুলো হলো মূলত উদ্ভিজ্জ উৎস। যে সব খাবারের স্বাস্থ্যকর ফ্যাট পাওয়া যায় সেগুলো হলো এমন কিছু মাছ, বাদাম এবং অ্যাভোকাডো। স্নেহ জাতীয় খাবারের মধ্যে এই খাবারগুলো খাওয়া সীমিত আকারে রাখতে হবে।
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে কি কি খাওয়া যাবে না
- গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত তেল চর্বিযুক্ত খাবার থেকে বিরক্ত থাকতে হবে। এছাড়া চিনি যুক্ত খাবারও খাওয়া উচিত নয়।
- গর্ভাবস্থায় মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা সেসব খাবারের বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে।
- এমন খাবার যে ঠিক কাঁচা এবং পুরোপুরি রান্না হয়নি সে খাবার খাওয়া ঠিক নয়। কেননা এই খাবারের পরজীবী এবং সালমোনিলা এর মতো ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে।
- কাঁচা মাছ খাওয়া উচিত নয়। কেননা কাঁচা মাছের রেসিপি ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী। তাই এরকম জাতীয় খাবার থেকে দূরে থাকাই ভালো।
- কাঁচা খাদ্যশস্য ও শিম, কাঁচা মুলা এবং সিমের বীজ ইত্যাদি খাবারগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা এতে সালমানিলা ও ই কলার মতো ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয়। যেটি শরীরের জন্য একেবারে উচিত নয়।
- ডিম, কাঁচা বা কম সিদ্ধ ডিম খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এরকম ডিমের রয়েছে ব্যাকটেরিয়া যা অনেক ক্ষতি করতে পারে।
গর্ভাবস্থায় শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া
- ফাস্টফুড যেমন নুডুলস ও পাস্তা
- আলু
- ভাত
- রুটি
- ভুট্টা
- সিরিয়াল বা কর্ণফ্লেক্স
- ওটস
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসে ফল ও শাকসবজি খাওয়া
শাকসবজি | ফলমূল |
---|---|
মিষ্টিকুমড়া | আম |
মিষ্টি আলু | কলা |
টমেটো | মালটা |
গাজর | কমলা |
পালং শাক | পেয়ারা |
মোটর শুটি | জাম্বুরা |
কাপ্সিকাম | বাঙ্গি |
গর্ভাবস্থায় প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়া
- মাংসঃ মাংস এমন একটি খাবার যেটিতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন রয়েছে। তবে মাংস যদি আপনি ভুলবশত আধা সিদ্ধ কিংবা কাঁচা খেয়ে ফেলেন তাহলে গর্ব অবস্থায় অনেক ক্ষতি হতে পারে। তাই মাংস খাওয়ার আগে অবশ্যই দেখে নিবেন সিদ্ধ হয়েছে কিনা। খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই সিদ্ধ মাংস খাবেন। আর অবশ্যই রান্নার সময় কম তেল ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন।
- মাছঃ মাছ হল খুবই প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্য। গর্ভকালীন সময়ে আপনি চেষ্টা করবেন প্রতিনিয়ত ২৮০ গ্রাম মাছ খাওয়ার। তাছাড়া সপ্তাহে কয়েক দিন বড় মাছ এবং বাকি কয়েকদিন দেড় থেকে দুই বাটি করে ছোট মাছের তরকারি খাওয়ার চেষ্টা করবেন। এর পাশাপাশি তেলাক্ত মাছ খাওয়ার গর্ভাবস্থায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা তুই লাগতো মেসেজ ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড রয়েছে যা শিশুর যথাসময়ে জন্মানোর জন্য ভূমিকা রাখে। কিছু তৈলাক্ত মাছের নাম হলঃ
- পুটি মাছ
- বাটা মাছ
- ইলিশ মাছ
- বাঁশপাতা মাছ
- মহা শোল মাছ
- চাপিলা মাছ
- দুধঃ গর্ভকালীন সময়ে প্রতিনিয়ত অন্ততপক্ষে এক গ্লাস দুধ খাবেন। কেননা দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও বিভিন্ন ধরনের খাদ্য পুষ্টি। আপনি যদি প্রতিদিন এক গ্লাস করে দুধ পান করেন তাহলে আপনার অনাগত সন্তানের দাঁত ও হাড় গঠনে অধিক পরিমাণে সহায়তা করে।
- পানিঃ গর্ভকালীন সময়ে গর্ভবতী মা ও সন্তানকে সুস্থ রাখার জন্য দিনে অন্ততপক্ষে ২ থেকে ৩ লিটার পানি পান করা প্রয়োজন। কেননা পানি শরীরের জন্য অধিক পরিমাণে উপকারী।
গর্ভবতী মায়ের প্রথম তিন মাসের খাবার তৈরি
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার
- আইরনঃ গর্ভাবস্থার শুরুর ৩ মাস পর থেকে আপনি আয়রন ট্যাবলেট খেতে পারবেন। একি খাওয়া আপনার শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা আয়রন ট্যাবলেট গর্ভবতী মায়ের রক্তশূন্যতা দূর করে। তাছাড়া আইরন ট্যাবলেট গর্বের সন্তানের জন্য খুবই ভালো।
- ক্যালসিয়ামঃ গর্ভধারণের তিন মাসের পর থেকে আপনি নিয়ম করে দুই বেলা ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেতে পারবেন। ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খাওয়ার পূর্বে আপনি অবশ্যই খাবার খেয়ে নিবেন। এছাড়াও আরো ভিটামিন ডি ভিটামিন সি সহ বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে পারবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url