থার্টি ফার্স্ট নাইট এর ইতিহাস ও উৎপত্তি - থার্টি ফাস্ট নাইট ইসলাম কি বলে

থার্টি ফার্স্ট নাইট এর ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন আজকের আর্টিকেলে। প্রতিবছর ৩১শে ডিসেম্বর রাত বারোটা এক মিনিটকে থার্টিফার্স্ট নাইট হিসেবে উদযাপন করা হয়। পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর মাধ্যমে শুরু হয়  নতুন বছরের আগমন। 

থার্টি-ফার্স্ট-নাইট-এর-ইতিহাস

ইসলামিক ভাষায় থার্টিফার্স্ট নাইট সম্পূর্ণ হারাম। মুসলিমদের  আনন্দ উৎসব বছরের দুইবার আসে। এই দুইবার সকল মুমিন  মুসলিমরা আনন্দ উপভোগ করে থাকেন। মুসলিমদের জন্য বছরের ২ ঈদ পালন করা ও উপভোগ করা মহান আল্লাহর তরফ থেকে আসে।

পেজ  সূচিপত্রঃ থার্টি ফার্স্ট নাইট এর ইতিহাস গুলো হলঃ

থার্টি ফার্স্ট নাইট এর ইতিহাস 

থার্টি ফার্স্ট নাইট এর ইতিহাস সম্পর্কে বলতে গেলে, থার্টিফার্স্ট নাইট এর উদযাপন কে শুরু করল এবং কেন শুরু করা হলো সে সম্পর্কে না জেনে বছরের পর বছর প্রত্যেক মুসলিম ভাই বোন এটিকে উদযাপন করে আসছি। অথচ এটা আমরা কখনো চিন্তা করেও দেখি না যে অন্যান্য দিনের মতোই এটিও একই রকম একটি দিন। এই দিনটিকে কেন সেলিব্রেট করতে হবে? অন্যান্য দিনের তুলনায় এই দিনে আলাদা কোন বৈশিষ্ট্য নেই। তাহলে এই থার্টিফার্স্ট নাইট কে উদযাপন করে কেন গুনাহগার হচ্ছি?

হযরত ঈসা (আ:) এর জন্মের অনেক আগে রোমানের মুশরিকরা জানোস নামের এক ঈশ্বরের ইবাদাত করত। সেই সময় তারা  তাকে শুরুর স্রষ্টা রূপে জানত। রোমানের মুশরিকরা  সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী ছিল, তার মধ্যে তারা janus এর ইবাদত করত। তারা বিশ্বাস করত যে তাদের অতীত,বর্তমান, ভবিষ্যৎ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে janus। আর এই কারণে জানোসের নামানুসারে বছরের প্রথম মাসের নাম দেয়া হয়  January। রোমানের মুশরিকরা এই মাস চলে আসলে ধুমধাম করে তারা এই দিনটিকে সেলিব্রেট করে।

রোমানের মুশরিকরা ফাস্ট নাইটকে উদযাপন করে এ কারণে যে তারা মনে করে তাদের ঈশ্বর জানোস কে খুশি করে যেন জানোস তাদের বছরটি মঙ্গল দিয়ে রাখে।তাছাড়া জানোস এর মূর্তি ছবি যখন দেখবেন এর দুইটি মাথা রয়েছে। রোমানের মুশরিকরা মনে করে জানোসের দুইটা মাথা দাঁড়া জানো সামনে এবং পিছনে দেখতে পাই। এর দ্বারা তারা বোঝায়  যে, জানস অতীত, বর্তমান,ভবিষ্যৎ সবকিছুই দেখতে পাই। এইরকম বিশ্রী শিরক এর আকিদায় কোন মুসলিম সমর্থন করতে পারে না। থার্টিফার্স্ট নাইট এর সম্পর্কে যদি কোন মুসলিম  ইতিহাস জানে তাহলে এটি কখনোই পালন করবেন না।

আল্লাহর নির্দেশে শুরু হওয়া প্রতিটি দিনই বরকতময় ও সুন্দর। মানুষের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতে কি ঘটবে এগুলো শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালা জানেন। আর তাই রোমানদের বিশ্রী শিরিক আকিদা বিশ্বাস করা ঈমান দুর্বলতার কারণ। থার্টিফার্স্ট নাইটের নোংরামিতে আজকাল অনেক যুবক-যুবতীরা  মেতে থাকে। ফাস্ট নাইটের জন্য আজকাল ছেলে মেয়েরা বিভিন্ন নেশা  জাতীয় দ্রব্য সেবন করে এবং অশ্লীলতায় মেতে ওঠে। কোন মুমিন মুসলমান  এগুলো কখনোই সমর্থন করতে পারে না। তাই প্রতিটা মুমিন মুসলমান ভাই বোনের উচিত থার্টিফার্স্ট নাইট কে এড়িয়ে চলা।

থার্টিফার্স্ট নাইট মানে কি 

থার্টিফার্স্ট নাইট হলো খ্রিস্টানদের ক্যালেন্ডার হিসেবে ৩১ ডিসেম্বর দিবাগত রাত। ৩১শে ডিসেম্বর রাত বারোটা এক মিনিটে এই থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন করা হয়। জানুয়ারির প্রথম ১ তারিখ যার শুরু প্রথম প্রহর। ৩১শে ডিসেম্বর রাত ১২ টার পর সারা বিশ্বের থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন করা হয়ে থাকে। এই দিনকে পালন করার জন্য বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান, নাচ গান, আতশবাজি ইত্যাদি  করা হয়ে থাকে। দুঃখের বিষয় হলো এটি যে  আজকাল মুসলিম দেশেও এই থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন করা হয়।

৩১শে ডিসেম্বর দিবাগত রাতকে বলা হয় নিউ ইয়ার। এছাড়া এমন  অনেক মুসলিম রাষ্ট্র রয়েছে যেখানে খ্রিস্টীয় ক্যালেন্ডার অনুসরণ  করা হলেও থার্টিফার্স্ট নাইট পালন করা হয় না। সেসব মুসলিম রাষ্ট্রের মধ্যে রয়েছে আফগানিস্তান, ইরান, সৌদি আরব, ইথিওপিয়া, ইসরাইল প্রভৃতি দেশ সমূহ। ১৫৮২ সাল থেকে ইংরেজি নববর্ষ পালন করা হয়। থার্টি ফাস্ট নাইটের ইতিহাস থেকে জানা গেছে ১৫৮২ সাল থেকে ইংরেজি নববর্ষের শুরু।

থার্টি ফার্স্ট নাইট সম্পর্কে ইসলামে যা বলে  

থার্টি ফার্স্ট নাইট সম্পর্কে ইসলাম কি বলে সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব এই পোস্টে। ইসলামী নীতি অনুযায়ী ফাস্ট নাইট উদযাপন করা সম্পূর্ণ হারাম। কারণ থার্টি ফার্স্ট নাইট এর ইতিহাস জানলে কোন মুমিন মুসলমান এটি উদযাপন করতে পারবে না। থার্টিফার্স্ট নাইট এটি কখনো কোন  ইসলামিক সংস্কৃতির মধ্যে পরেনা। মুসলিম সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে থার্টিফার্স্ট নাইট হলো একটি অপসংস্কৃতি। আর তাই একজন রুচিশীল ও ঈমানদার মুসলমান এটি কখনো উদযাপন করতে পারে না।

আল্লাহ তায়ালা সূরা আলে ইমরানের ৮৫ নাম্বার আয়াতে বলেছেন, " যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মের অনুসরণ করবে কখনো তার আমল গ্রহণ করা হবে না। এবং পরকালে সে ক্ষতিগ্রস্তদের  অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে"। এছাড়াও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, " যদি কোন ব্যক্তি অন্য জাতির সাথে আচার-আচরণে, সভ্যতা-সংস্কৃতিতে সাদৃশ্য গ্রহণ করবে সেই ব্যক্তি তাদের দলভুক্ত হিসেবে বিবেচিত হবে "। ( আবু দাউদঃ হাদিস )

আমাদের বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো কোন বিজাতীয় সংস্কৃতিতে এবং মুসলিমদের কোন কাজে মুশরিকদের সাহায্য ও সহযোগিতা গ্রহণ করতেন না। এজন্যই আমাদের প্রতিটা মুসলিমের উচিত বিজাতীয় সংস্কৃতিতে অংশগ্রহণ না করা। এবং আমাদের মুসলিমদের কোন কাজে মুশরিকদের সাহায্য সহযোগিতা গ্রহণ না করা। কারণ  বিশ্বনবী যেটা করেননি মুসলিমরা সেটা কখনো করতে পারে না। একজন মুমিন মুসলমান কখনো বিজাতীয় সংস্কৃতিতে নিজেকে জড়ায় না।

যে সময় থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন করা হয় সেই সময়ে মুসলিমদের উচিত আল্লাহ তায়ালার ইবাদাতে মশগুল থাকা। থার্টি ফার্স্ট নামক এই রাত্রিতে সারারাত বেহায়াপনা, ফিতনা ও নিশা মিটানোর সময় হিসেবে বেছে নেওয়া মারাত্মক গুনাহের কাজ। আর তাই সারারাত এসব গুনাহের কাজ না করে নবীর প্রেমে ও আল্লাহর ইবাদতে রাত্রি যাপন করা উচিত। তাছাড়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,' মহান আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার আসমানে এসে প্রতিটি সাহায্যপ্রার্থীকে, অসুস্থ ব্যক্তিকে ডেকে ডেকে দিয়ে যান যা সেই ব্যক্তি চায়।" তাই এই রাতটিকে আসুন ইবাদাতে রাত হিসেবে পালন করি ও আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন করি।

থার্টিফার্স্ট নাইট পালনের প্রচলন যেদিন থেকে শুরু 

থার্টিফার্স্ট নাইট পালনের প্রচলন যেদিন থেকে শুরু হয়েছে সেদিন থেকে যুবক যুবতীরা বিভিন্ন নেশা ও নাচ গান, আতশবাজিতে মেতে উঠেছে। যেটি ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে একেবারেই নাজায়েজ। এই থার্টিফার্স্ট নাইট পালনের প্রচলন টা শুরু হয়  হযরত ঈসা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্মের ৪৬ বছর আগে থেকে। সেই সময় রোমান-মুশরিকরা  তাদের দেবতা জানোস এর নামানুসারে ইংরেজি নববর্ষ জানুয়ারি নামকরণ করেন। তাদের এই শিরকি চিন্তাভাবনা থার্টি ফার্স্ট নাইট পর্যন্ত নিয়ে যায়।

থার্টি-ফার্স্ট-নাইট-এর-ইতিহাস

রোমান মুশরিকরা তাদের দেবতার স্মরণে এই থার্টিফার্স্ট নাইট পালন করে থাকে। তারা মনে করে এই থার্টি ফাস্ট নাইট পালন করলে তাদের দেবতা রক্ষা করবেন ও মঙ্গল দান করবেন। তাদের এইসব চিন্তা ধারাগুলো ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে শির্ক। থার্টিফার্স্ট নাইট  মূলত রোমান মুশরিকদের মাধ্যমে প্রচলন শুরু হয়। সেই সময় থেকে আজ অব্দি এই বিজাতীয় সংস্কৃতি টা  প্রায় রাষ্ট্রের উদযাপিত হয়ে থাকে। বিভিন্ন অনুষ্ঠান, নাচ গান, আতশ বাজি, পটকা বাজি, বিভিন্ন নেশা দ্রব্য  ইত্যাদির মাধ্যমে থার্টিফার্স্ট নাইট মানুষ উদযাপন করছে।

থার্টিফার্স্ট নাইট এর উৎসব যেভাবে পালিত হয় 

থার্টি ফার্স্ট নাইটের উৎসব বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালিত হয়। ৩১শে ডিসেম্বর রাত বারোটা এক মিনিটে থার্টিফার্স্ট নাইট পালন করা হয়। জানুয়ারি মাসের প্রথম প্রহর ৩১শে ডিসেম্বর রাত বারোটা এক মিনিট যেটাকে বলা হয় নিউ ইয়ার ইভ। ৩১শে ডিসেম্বর রাত বারোটা থেকে সারা রাত্রি এই দিবসটির সকলে উদযাপন করে। এই দিন রাত্রে আতশবাজি, নাচ গান, পটকাবাজি, নেশা দ্রব্য  বিভিন্ন বাজনার মাধ্যমে এই দিন রাতটি উদযাপন করে।

৩১শে ডিসেম্বর রাতের শুরু থেকে ছোট বড়,ছেলে মেয়ে, প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক সকলে অপেক্ষা করে কখন রাত বারোটা এক বাজবে। কারণ রাত বারোটা এক মিনিট বাজলে  বিভিন্ন আতশবাজি ফাটিয়ে এই থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন করে। এই উৎসবটি পালন করতে গিয়ে  বহু মানুষ এটা ভুলে যায় যে এই আতশবাজির কারণে অনেক নিরীহ প্রাণ চলে যায়। নিরীহ প্রাণ যেমন পাখি, বাদুড়  ও বিভিন্ন প্রজাতির ছোট প্রাণীরা আতঙ্কে প্রাণ হারায়। এই আতশবাজির কারণে নিরীহ পাখিগুলোর প্রাণ চলে যায়।

থার্টিফার্স্ট নাইটের উৎসব পালন করতে গিয়ে অনেক মানুষ বুঝতেই পারে না যে কতটা ক্ষতি হয়ে যায়। ছোট ছোট প্রাণগুলো আতশবাজি ফাটার কারণে চলে যায়। এছাড়াও যুবক যুবতীরা যৌনতার লালসাতে ডুব দেয়। বিভিন্ন নেশা দ্রব্য পান করে যুবক যুবতীরা গুনাহের সাগরে ভাসতে থাকে। তাই আসুন থার্টিফার্স্ট এর মত  এমন একটি রাত উদযাপন করা থেকে আমরা সকলেই বিরত থাকি।

বুদ্ধিজীবী সমপ্রদায়ের মাধ্যমে থার্টিফার্স্ট নাইট 

বুদ্ধিজীবী সমপ্রদায়ের মাধ্যমে থার্টিফার্স্ট নাইট, এদেশে এই নোংরা কালচার টি এই বুদ্ধিজীবীরাই আমদানি করেছেন। এ দেশকে এবং এই সমাজকে শালীনভাবে গড়ে তোলার পরিবর্তে অশ্লীলতার সৃষ্টি করতে উৎসাহী করেছেন এ দেশের কিছু বুদ্ধিজীবীরা। তারা এক দিকে যেমন পহেলা বৈশাখের মহত্ব প্রচার করে থাকেন অন্যদিকে তেমন থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন করার উস্কানি মূলক প্ররোচনা দিয়ে থাকেন।

কিন্তু এর থেকেও আশ্চর্যজনক এই যে, সেইসব বুদ্ধিজীবীরা আবার যুব সমাজকে  উপদেশ দিয়ে থাকে যে মাদক, সন্ত্রাস, ও নারী নির্যাতনকে না বলুন। একজন রুচিসম্মত মানুষ এবং একজন মুমিন মুসলমান কখনোই থার্টিফার্স্ট নাইট নামক নোংরামিকে সমর্থন করতে পারেন না। এ দেশে হওয়া এমন পাপাচার  বন্ধ করার জন্য নাগরিক সচেতনতা প্রয়োজন। এমন একটি মুসলিম দেশে  অভিভাবক হিসেবে সরকারের উচিত বিজাতীয় উৎসব কে দমন করা।

থার্টি ফার্স্ট নাইট এর উৎপত্তি 

থার্টি ফার্স্ট নাইট এর উৎপত্তি ইংরেজি নববর্ষ চালু হওয়ার পর থেকে থার্টি ফার্স্ট নাইট এর পালন শুরু হয়েছে। ১৫৮২ সালে গ্রেগোরিয়ান  ইংরেজি ক্যালেন্ডার প্রবর্তিত করেন। ইংরেজি এই ক্যালেন্ডার খ্রিস্ট ধর্মের একজন যাজক পোপ গ্রেগোরি চালু করেন। এই ক্যালেন্ডার চালু হওয়ার আগেও নববর্ষ পালনের বিভিন্ন রীতি রেওয়াজ ছিল। কিন্তু ক্যালেন্ডার চালু হওয়ার পর পাকাপোক্তভাবে ১লা জানুয়ারি নববর্ষ অর্থাৎ থার্টি ফার্স্ট নাইট পালনের রেওয়াজ শুরু হয়। 

থার্টিফার্স্ট নাইট এটি হলো খ্রিস্টীয় সংস্কৃতি। পোপ গ্রেগোরিয়ান এর তৈরি করা ক্যালেন্ডারের হিসেব অনুযায়ী ৩১শে ডিসেম্বর দিবাগত রাত্রে এই থার্টিফার্স্ট নাইট উৎপত্তি হয়। বছরের এই শেষ রাতকে উদযাপন করা একটি খ্রিস্টীয় সংস্কৃতি। এই থার্টিফার্স্ট নাইট কে বিশ্বব্যাপী ইসলামিক স্কলাররা  হারাম বলে ঘোষণা করেছেন। থার্টিফার্স্ট নাইট  অর্থাৎ নববর্ষ পালন ইসলাম ও মমিন মুসলমানের জন্য সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এটি হলো ইসলামবিরোধী কাজ যা  মুসলমানদের পালন করা উচিত নয়।

থার্টিফার্স্ট নাইট এর বাংলাদেশে প্রসার 

থার্টিফার্স্ট নাইট এর বাংলাদেশে প্রসার হয়েছে বিগত ২৪ বছর আগে। বাংলাদেশের ২০০০ সালে এক মধ্য রাতের মিলেনিয়াম পালনের মধ্য দিয়ে ৩১শে ডিসেম্বর থার্টিফার্স্ট নাইট এর শুরু হয়। এরপর বাড়তে থাকে অপসংস্কৃতি ব্যাপক প্রসার। এই অপসংস্কৃতির মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির মানুষজন উৎসবে মুখর হয়ে থাকে। বৃত্ত শালী ও উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারের যুবক যুবতীরা থার্টিফার্স্ট নাইট এর মত বেহেল্লাপনায় গা ভাসিয়ে দেয়। থার্টিফার্স্ট নামুক নতুন বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে আমাদের বাংলাদেশের যুবক যুবতীরা হারিয়ে যায় গোনাহের সাগরে।

থার্টি-ফার্স্ট-নাইট-এর-ইতিহাস

আজকের এই সমাজে সংঘটিত পরিস্থিতি সামাল দিতেও হিমশিম খাচ্ছে আইন শৃঙ্খলা ও প্রশাসন। থার্টিফার্স্ট নামক  যে দিবস পালিত হয় সেটি বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের মানদন্ডে কখনোই বৈধতা রাখে না। এই ধরনের দিবস পালনের মাধ্যমে বাংলাদেশে ধর্মীয় মূল্যবোধ  ও পারিবারিক বন্ধন নষ্ট হয়ে যায়। অবশেষে বলতে পারি ধর্মীয় অনুশাসন ও সাংবিধানিক সংস্কৃতি বজায় রাখার জন্য এরকম সমাজ বিধ্বংসী অপসংস্কৃতি বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

ইসলামের দৃষ্টিতে থার্টিফার্স্ট নাইট অর্থাৎ নববর্ষ পালন

ইসলামের দৃষ্টিতে থার্টি ফার্স্ট নাইট অর্থাৎ নববর্ষ পালন করা সম্পূর্ণ হারাম। বিশ্বব্যাপী অনেক ইসলামি স্কলারশিপরা এই দিবসটিকে মুসলিমদের জন্য সম্পূর্ণরূপে হারাম ঘোষণা করেছেন। একজন মুমিন মুসলমান ব্যক্তি কখনোই থার্টি ফার্স্ট নাইট কে সমর্থন করতে পারেনা। থার্টিফার্স্ট নাইটে এর  ইতিহাস জানলে কোন মুসলমানই এটা সমর্থন করতে পারে না। আসুন আমরা জেনে নেই এই দিবস পালনের ক্ষেত্রে কি কি ঘটে–

  • আতশবাজি ও পটকা বাজিঃ আতশবাজি ও পটকা বাজি মধু দিয়ে এই আনন্দ উপভোগ করে। বিভিন্ন সড়কে রাস্তার মোড়ে বা ভবনের ছাদে, উচু স্থানে আতশবাজি ও পটকা ফুটানো হয়। এগুলোর অতিরিক্ত শব্দের কারণে ব্যাপক আতংক ও ভীতি সৃষ্টি হয়। সাধারণ জনগণ এইগুলোতে বিরক্ত হয়ে যায় এবং অসুস্থ ব্যক্তিরা ভীষণ কষ্ট পান। এরই প্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা, সূরা আল আহযাবে ৫৮ নাম্বার আয়াতে বলেন, " যারা বিনা অপরাধে মমিন পুরুষ ও নারীদের কষ্ট দিয়ে থাকে, তারা মিথ্যে অপবাদ ও প্রকাশ্য পাপের ভাগীদার হবেন "।
  • গান-বাজনা করাঃ থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন করা কালীন সময়ে বিভিন্ন গান বাজনার আয়োজন করে থাকে। ডিজে পার্টি, ফ্যাশন শো, কনসার্ট, অশ্লীল নৃত্য, ফায়ার প্লে, ফানুস উড়ানো সহ  বিভিন্ন কাজ করার মাধ্যমে থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন করে।
  • মাদকদ্রব্য সেবনঃ থার্টিফার্স্ট এর রাতে যুবক যুবতীরা মাদকদ্রব্য সেবন করে। এবং মাতাল হয়ে ঘটায় বিভিন্ন অপকর্মের মতো ঘটনা। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন,মুমিনগণ মদ-জুয়া,মূর্তিপূজা,শয়তানের কাজ এগুলো বর্জন করো। যেন তোমরা সফল হতে পারো। শয়তান এগুলোর মাধ্যমে তোমাদের মাঝে শত্রুতা ও হিংসাত্মক কাজ করতে চায়, আল্লাহর স্মরণ এবং সালাত থেকে তোমাদের দূরে রাখবে। সুতরাং তোমরা কি এসব কাজ থেকে বিরত হবে না "? (সূরা আল -মায়িদা আয়াত ;৯০-৯১)।

  • যিনা ব্যভিচারঃ থার্টি ফাস্ট নাইট রাতে যুবক-যুবতীরা অবাধে মেলামেশা করে ও অপকর্মের জড়িত হয়। এই দিন  আবাসিক হোটেল, নাচঘর, পানশালা, কমিউনিটি সেন্টার, নাইট ক্লাব, সমুদ্র সৈকত গুলো পরিণত হয় এক একটি পতিতালয়ে। এখানে অপকর্মে লিপ্ত হয় উঠতি বয়সে ছেলেমেয়েরা।

  • বিধর্মীদের সাথে সাদৃশ্যঃ থার্টি ফার্স্ট নাইট চালু হয়েছে বৃষ্টি ও জগতে। সে সময় থেকে  এই দিনটি উদযাপন করা হয়। এই দিবস পালন করার মাধ্যমে বিধর্মীদের সাথে সাদৃশ্য রেখেছে। এটি সম্পূর্ণ ইসলাম বিজাতীয়  সংস্কৃতি। যা পালন করা একেবারে নিষিদ্ধ। 

  • সময়ের অপচয়ঃ ইসলামিক সংস্কৃতি অনুযায়ী থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন করা নিষিদ্ধ। ইসলামে মানুষের প্রতিটি সময়ের মূল্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।তাই আমরা থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন করে অনেক সময় নষ্ট করছি। যে সময় গুলো আর কখনো ফিরে আসবে না। আর তাই সময়ের মূল্য বোঝা উচিত এবং থার্টিফার্স্ট নাইট এর বর্জন করা উচিত।

  • অর্থের অপচয়ঃ থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে যেসব আয়োজন করা হয় সেখানে অনেক বেশি অর্থ খরচ করতে হয়। এসব অর্থ খরচ করা মানে অর্থের অপচয় করা। অথচ ইসলামের অর্থ অপচয় করতে নিষেধ করা হয়েছে।

  • টাইট ফিটিং পোশাক পরাঃ থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপনের জন্য যুবক-যুবতীরা প্রায় নগ্ন পোশাক পরিধান করে। যেটাকে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  পরিধান করতে নিষেধ করেছেন।

  • শরীরের ট্যাটু আঁকানোঃ এই দিবস উদযাপন করার উপলক্ষে অনেকে আছেন যারা শরীরে ট্যাটু অংকন করেন। যেটি ইসলামের দৃষ্টিতে  সম্পূর্ণ হারাম।

শেষ কথাঃ থার্টি ফার্স্ট নাইট এর ইতিহাস

থার্টি ফার্স্ট নাইট এর ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি আজকের আর্টিকেলে। ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে কোন মুমিন মুসলমান কখনোই থার্টিফার্স্ট নামক বিধর্মীও সংস্কৃতিকে সমর্থন করতে পারেনা। থার্টিফার্স্ট নাইট  নামক দিবসে গুনাহের সাগরে লিপ্ত না হয়ে আল্লাহ তায়ালার ইবাদতে মশগুল হয়ে আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন করা উচিত। পরিশেষে এটাই বলি মুসলিম হিসেবে থার্টিফার্স্ট নাইট কে  বর্জন করি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url